নোটিশ:

নোটিশ: "এটা আমার ব্যক্তিগত ব্লগ। এই ব্লগ থেকে কেউ আমার অনুমতি ব্যতীত কোন গল্প অন্য কোথাও প্রকাশ করতে পারবেন না।"

শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৬

টুনি ও প্রজাপতি



টুনি তার নাম। বাবা মায়ের একমাত্র আদরের মেয়ে। সে কেবল অ আ ক খ পড়ে। তার একটা বর্ণমালার বই আছে। বইটি খুবই সুন্দর। ছড়ায় ছড়ায় বর্ণমালা দিয়ে বইটি সাজানো। রঙিন সব ছবি। প্রজাপতির ছবি। পাখির ছবি। ফলের ছবি। ফুলের ছবি। প্রতিদিন জানালার পাশে বসে টুনি বর্ণমালার বই পড়ে।

মায়ের স্বপ্ন


খোদেজা বেগমের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন তার সন্তান শাকিল এদেশের একজন নামকরা ডাক্তার হবে। গরিব দু:খী মানুষের সেবা করবে। অভাবের সংসারে কত কষ্ট করে খোদেজা তার সংসার চালাচ্ছেন তা শুধু আল্লাই ভালো জানেন। তার সম্পদ বলতে কিছু নেই। রেললাইনের পাশেই এক বস্তিতে তিনি তার সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন। তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করে নিজে না খেয়ে শাকিলের লেখাপড়ার খরচ যোগাচ্ছেন। 

সিয়ামের নীল ঘুড়ি


গ্রীষ্মের ছুটিতে দাদার বাড়িতে বেড়াতে আসল সিয়াম। সে বিকেল বেলা মাঠের ধারে খেলা করতে গেল। তখন তার চোখের সামনে ভেসে উঠল নাটাই হাতে বিভিন্ন বয়সের ছেলেরা ঘুড়ি উড়াচ্ছে। মাঠে তখন সোনালী রোদ জলমল করছে। গাঢ় নীল আকাশে সাদা-সাদা ছেঁড়া মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। এমনই সুন্দর বিকালে আকাশ ভর্তি লাল, কালো, নীল, সবুজ ঘুড়িসহ আরো কত রকমের ঘুড়ি যে উড়ছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কোনো ঘুড়ির লম্বা লেজ, দেখতে অনেকটা সাপের মতো। আকাশে সাপের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। আরো অনেক রকম ঘুড়ি আছে। কোনোটা বিমানের মতো, কোনোটা পাখির মতো, কোনোটা আবার ছিল বাক্সের মতো, কোনটা প্রজাপতির মতো।

পুতুলের বিয়ে


সুমি তার আব্বুকে বলছে, আব্বু আমি আমার পুতুলের বিয়ে দিব।
সুমির বাবা বললো, তাই নাকি! কার পুতুলের সাথে?
– রিমার পুতুলের সাথে।
– এখন আমাকে কি করতে হবে?
– রিমার বান্ধবী সবাই বরযাত্রী নিয়ে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসবে। তাদেরকে আয়োজন করে খাওয়াতে হবে।
– ঠিক আছে। তুমি আমার আদরের মেয়ে তোমার কথা কি ফেলতে পারি।

আনিকার কবুতর



সাড়ে তিন বছরের মেয়ে আনিকা। তার পুরো নাম আফরিন সুলতানা আনিকা। আব্বু-আম্মু আদর করে ডাকে আনিকা। এই বয়সেই পোষা প্রাণীর প্রতি তার অনেক দরদ। এইতো কিছু দিন আগে আনিকার আব্বু তার নামে আকিকা দেয়ার জন্য একটি খাসী কিনে আনলেন। খাসী দেখে আনিকা খুব খুশি হয়। এই খাসী সে পালবে। কিছুতেই এই খাসী জবেহ করতে দিবে না। রাতে ঘুমানোর আগে আনিকা তার আব্বুকে বলছে, আব্বু আমার খাসী তুমি জবেহ করবে না। আমি তাকে জবেহ দিব না। যদি তুমি জবেহ কর তাহলে কিন্তু আমি খুব কান্না করব।

ফেরা


এক.
১৯৯৫ সাল।
শীতের সকাল। চারদিকে কুয়াশা। কুয়াশার জন্য দূরের লোকজন তেমন দেখা যায় না। এখনও সূর্য উঠেনি। জসিম উদ্দিন রেললাইনের পাশ দিয়ে হাঁটছেন। ডাক্তারের পরামর্শে প্রতিদিন ভোরে উঠে তিনি হাঁটেন। কিছুক্ষণ হাঁটার পর তার কাছে মনে হল কোথাও একজন কাঁদছে। কয়েক কদম যাওয়ার পর দেখলো আট-নয় বছরের একটি মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে তার দিকে এগিয়ে আসছে। জসিম উদ্দিন যতই সামনে যাচ্ছে ততই মেয়েটি সামনে আসছে। মেয়েটি ইতোমধ্যে জসিম উদ্দিনের কাছাকাছি চলে আসলো। জসিম উদ্দিন কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই মেয়েটি তাকে ঝাপটে ধরে বললো, আংকেল আমার আব্বু আমাকে রেখে চলে গেছে। আব্বুকে খুঁজে দেন। বলেই সে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।

মুক্তি


সোহেল সাবিনাকে অনেক ভালোবেসেছিল। তারপরও সোহেল সাবিনাকে তার জীবন থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। এছাড়া কি আর করার ছিল তার। সে সোহেলের জীবনটাকে তিলে তিলে শেষ করে ফেলেছে। ওকে নিয়ে সারাক্ষণ আতংকে থাকত সোহেল। কখন জানি কি অঘটন ঘটিয়ে ফেলে। সোহেল যতই চাচ্ছিল সাবিনার জীবন থেকে মুক্তি পেতে সাবিনা ততই তার ঘাড়ে চেপে বসেছে। তাইতো সোহেল নিরূপায় হয়ে আজ সাবিনাকে চিরজীবনের জন্য মুক্তি দিল। সে আর আসবে না কোন দিন সোহেলের জীবনে।

মর্জিনা বিবি


রাত আনুমানিক বারোটা। খালেদার চোখে ঘুম নেই। মনটা ছট ফট করছে। ইচ্ছে হল বাইরে বের হতে। রুম হতে বারান্দায় আসতেই দেখে কাজের মহিলা মর্জিনা বিবি বারান্দায় বসে আছে। তার চোখে পানি। খালেদা মর্জিনা বিবির দিকে এগিয়ে গেল।
- আচ্ছা দিদি আপনি এখনও ঘুমান্নি!

লাল গরু


ঈদুল আজহার আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। বড় ভাই কামাল উদ্দিনের মৃত্যুর পর জামাল উদ্দিন কোন ঈদে কোরবানি দিতে পারেনি। আজ থেকে পনের বছর পূর্বে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন কামাল উদ্দিন। জামাল উদ্দিন ভাবছে এবার নিজের পোষা লাল গরুটা বিক্রি করে কোরবানিতে শরিক হবে।
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর জামাল উদ্দিন ও স্ত্রী জরিনা বেগম তাদের শোবার ঘরে আসলো। জামাল উদ্দিন বালিশটা টেনে হেলান দিয়ে বসলেন। জরিনা বেগম একটি পান মুখে দিয়ে বললেন, কি ব্যাপার আইজকা এতো তাড়াতাড়ি শুইয়া পড়বেন নাকি?

বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৬

ময়নার বিয়ে



- ময়নার মা! ও ময়নার মা।
স্বামী গফুর মিয়ার ডাকে তাড়াহুড়া করে ময়নার মা তার কাছে আসলো। 
- কি হইছে? এত ছিল্লাচ্ছেন ক্যান?
- আরে হুন না। একটা সুখবর আছে?
- সুখবর! এই ভরদুপুরে আবার কি সুখবর নিয়ে আসলেন?
- আমাগো ময়নার জন্য একটা ভালা পুলা পাইছি। পুলার ম্যালা পয়সা আছে। বিদেশ থাইক্কা আইছে।

নালিশ


মনিষার বয়স এখন তিন বছর। সে এখন কথা বলতে পারে। খেলতে পারে। রাগ করতে পারে। বায়না ধরতে পারে। বিশেষ করে খাবার খাওয়ানোর সময় অনেক বায়না ধরে। কোন কিছুতেই ভুলিয়ে তাকে খাওয়ানো যায় না। তাকে খাবার খাওয়ানোর জন্য রীতিমত তার সাথে যুদ্ধ করতে হয়। তাকে খাবার খাওয়ানো যে কত কঠিন তা মনিষার মা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। কত রূপকথার গল্প ও মিথ্যার ভা-ার সাজিয়ে, ভয় দেখিয়ে তাকে খাওয়াতে হয় তা বলা মুশকিল। কখনো এক লোকমা মুখে দিলে এ রুম ছেড়ে অন্য রুমে চলে যায়। এ নিয়ে তার মাকে সারাক্ষণ তার পিছনে দৌঁড়াতে হয়।
সেদিন অফিস থেকে এসেই দেখি মনিষার মা ফরিদা তাকে সারা ঘর দৌঁড়িয়ে খাবার খাওয়াচ্ছে। আমাকে দেখেই মনিষা দৌঁড়ে এসে আমাকে ঝাপটে ধরে বললো, আব্বু আমি আম্মুর হাতে ভাত খাব না। আম্মু আমাকে বকা দেয়! আমাকে মারে!

আয়না

রমনা পার্ক রাজধানী ঢাকার ঠিক মধ্যভাগে নগরের অক্সিজেন সরবরাহকারী হিসেবে নীরবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। নানা প্রজাতির গাছ, কৃত্রিম হ্রদ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কারণে পার্কটি নগরবাসীর এক প্রিয় ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। এখানে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাসহ নানা শ্রেণী মানুষের আগমন ঘটে।
মুনিয়া ও শ্রাবণ নামের এক প্রেমিক-যুগল রমনা পার্কের ভিতর প্রবেশ করল। তারা হাঁটতে হাঁটতে রমনা পার্কের কোন একটি জায়গায় এসে বেঞ্চের উপর বসল। কিছুক্ষণ পরই নয়/দশ বছরের একটি মেয়ে কতগুলো বকুল ফুলের মালা নিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসল। মেয়েটির পরনে একটি ময়লা জামা ও একটি স্যালোয়ার। মেয়েটি অসহায় দৃষ্টিতে ডান হাতে একটি মালা নিয়ে শ্রাবণের সামনে ধরে বললো, সাব মালা নিবেন! মালা! বকুল ফুলের মালা। নেন না একটা মালা। দ্যাহেন কি সুন্দর ঘ্র্যান! আফারে খুব মানাইবো।

বিবেক


রাত প্রায় ১২টা বাজে। বেলাল নাদিরাকে নিয়ে তার ব্যাচেলর বাসায় ঢুকেই দরজাটা লাগিয়ে দিল। এ দৃশ্য দেখে তখন নাদিরার হাত পা কাঁপা শুরু করে দিল। একি হচ্ছে! এ আমি কোথায় আসলাম? একজন মেয়ে হয়ে এত রাতে একজন ব্যাচেলর ছেলের বাসায়! তা হতে পারে না। আমাকে মিথ্যে বলে সে এখানে নিয়ে আসছে কেন? কি তার উদ্দেশ্যে? 
- বেলাল তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে আসলে?
- এটা আমার বাসা।

ফাঁদ


আজ অফিস থেকে বের হতে শাহিনের অনেক দেরি হয়ে গেছে। সারাদিন তার উপর ধকল গেছে। তাছাড়া বাসার বাজার সদাই করতেও অনেক সময় ব্যয় হয়ে গেল। রাত আনুমানিক দশটা বাজে। মতিঝিল শাপলা চত্বরের পাশে রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছে শাহিন। কিছুক্ষণ পর একটি খালি রিক্সা আসল।  
- এই যাবেন ভাই?
- কোথায় যাবেন?
- শাহবাগ।
- যাব। উঠেন।

সম্পর্ক

- কিরে সাইফ কি করছিস? চল ঘুরে আসি। হঠাৎ বিকেল বেলা কাইফ সাইফের রুমে এসে হাজির। 
- তুই এ সময়! কি মনে করে?
- কিছু মনে করে না। হঠাৎ তোর কথা মনে পড়ল তাই চলে আসলাম। এ ছাড়া অনেকদিন যাবত ভাবছি তোর সাথে একটা কথা শেয়ার করব? 
- কি কথা?
- চল এখানে নয় অন্য কোথাও গিয়ে বলব।
- কোথায় যাবি?
- নদীর পাড়ে।
- ঠিক আছে চল।

পকেটমার

- এই যে ভাই ভাড়া দেন। 
কন্ট্রাক্টর ভাড়া চাইতেই প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে শক খেলাম। আমার মানিব্যাগ গায়েব হয়ে গেছে। পকেটে খুচরা টাকাসহ সব মিলিয়ে ৫০০/৬০০ টাকা ছিল। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ভোটার আইডিকার্ডসহ সবই পকেটমার নিয়ে গেছে, আমি টেরও পেলাম না। 
- কী হলো ভাই ভাড়া দেন।

জিনের আছর


রাত বারটা।
চারদিকে নীরব নিস্তদ্ধতা। কোথাও কেউ নেই। এ মুহূর্তে গ্রামের কেউ এখন জেগে নেই। এমন সময় রুমা একা ঘর থেকে বের হলো প্রস্রাব করার জন্য। স্বামী শিহান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আছে। চারপাশ থেকে শিয়ালের হুক্কা হুয়া ডাক শুনা যাচ্ছে। রুমা যখন বাথরুমে গিয়ে বসল ঠিক তখনই উপর থেকে একটা খচখচ আওয়াজ হলো। রুমা ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে গেল।

মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৬

বেকার

এক
- মা, মা তুমি কোথায়? ভাত দাওতো। এই কথা বলতে বলতে আদর খাবার রুমে ঢুকল।
আদরের মা চড়া গলায় বললো, কি হয়েছে? এত চিল্লাছিস কেন? নবাবজাদা সারাদিনতো টইটই করে ঘুরে বেড়াস আর ঘুম থেকে উঠস দিনের বারটায়। ঘুম থেকে উঠেই খাবারের জন্য চিল্লাপাল্লা শুরু করে দিস। বলি ভাত কোথা থেকে আসে? আর কত বেকার থাকবি? একটু কাজ করে খাসনা। 
- মা, প্রতিদিন তোমার একই কথা আর ভাল লাগে না। 

রবিবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৬

ফেসবুক প্রেম


মীম এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষা শেষ। এখন পড়ার কোন চাপ নেই। যথেষ্ট সময় এখন তার হাতে। মীম তার ছোট নাম। পুরো নাম তানিয়া সুলতানা মীম। মেয়ে এখন অনেক বড় হয়েছে। তাই বাবা তাকে একটি এনড্রুয়েড মোবাইল সেট কিনে দেয়।

রহস্যময় পুকুর ও বটগাছ


জুনায়েদদের বাড়ির পাশেই ছিল পুরানো একটি পুকুর। পুকুর পাড়েই ছিল বিশাল একটি বড় বট গাছ। বট গাছটির ডালপালা এতই বিশাল ছিল যে সবগুলো ডালপালাই পুকুরে গিয়ে পড়েছে। বট গাছের ডালপালার কারণে সূর্যের আলো কমই পড়ত পুকুরে। সারাদিনই অন্ধকারাচ্ছন্ন ভাব থাকতো এই পুকুরে । এখন এই জায়গাটা এতই ভূতুরে হয়েছে যে দিনের বেলাও এখান দিয়ে মানুষজন যেতে ভয় পায়। আর সন্ধ্যার পরতো এখান দিয়ে লোকজন একেবারেই যায় না। প্রায় প্রতিদিনই এখানে এসে কোন না কোন লোক ভয়ের শিকার হয়। এই পুকুরে এক সময় মাছ চাষ করতো কিন্তু এখন আর কেউ মাছ চাষ করে না। ইতোমধ্যে এই পুকুরকে নিয়ে অনেক ঘটনা ঘটেছে। কোন ঘটনারই কোন সমাধান এই এলাকার মানুষ দিতে পারেনি। সবার কাছে এই পুকুর ও বটগাছটি রহস্যময় হয়ে রয়ে গেল।

শবযাত্রা


- ভাইসব আজ বিকাল তিন ঘটিকায় কড়াই গ্রামের ঈদগাহ মাঠে এক বিরাট ফুটবল ফাইনাল খেলার আয়োজন করা হইয়াছে। উক্ত খেলায় অংশগ্রহণ করবেন কড়াই গ্রাম একাদশ বনাম সিধুলী গ্রাম একাদশ। উক্ত খেলায় আপনারা সকলে আমন্ত্রিত।
এভাবেই মাইকিং করছিল কড়াই গ্রামের বাবুল মিয়া। সবাইকে আজ বিকাল বেলায় তাদের মাঠে খেলা দেখার আমন্ত্রণ জানানো হল। 
বিকাল তিনটার পূর্বেই আশে পাশে পাশের গ্রাম থেকে হাজার হাজার লোক খেলা দেখতে কড়াই গ্রামের ঈদগাহ মাঠে উপস্থিত হলো। লোকে লোকারন্য হয়ে গেল খেলার মাঠের চারপাশ। নির্দিষ্ট সময়ে খেলা শুরু হলো।

ভয়

আমি তখন ক্লাশ সেভেন এ পড়ি। তখন ছিল বর্ষাকাল। আমাদের গ্রামের পাশেই ছিল হাই স্কুল। সেই স্কুলে এক সাথে লেখাপড়া করতাম আমি ও শিহাব। আমরা এক সাথে সব সময় থাকতাম। শিহাবের বাড়ি আমাদের বাড়ি থেকে বেশী দূরে নয়। ওদের বাড়ি ছিল ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায়। আমাদের গ্রামে এসে তারা বাড়ি করেছে। বর্ষাকাল এলেই আমি ও শিহাব এক সাথে ঘুরাঘুরি করতাম। খেলাধূলা করতাম। মাছ ধরতাম। অনেক মজা করতাম। আমাদের গ্রামের পাশেই ছিল এক বিল। বিলের উত্তর পাশে আমাদের গ্রাম ও দক্ষিণ পাশে ঝিকাতলা গ্রাম। সেই বিলে আমি ও শিহাব মাঝে মাঝে রাতের বেলায় মাছ ধরতে বের হতাম। আরো অনেকেই তখন বর্ষাকালে মাছ ধরত। টেটা দিয়ে আমরা মাছ ধরতাম।

বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৬

প্রতিজ্ঞা


সেই ছোট বেলা থেকেই আমি খুব চঞ্চল স্বভাবের ছিলাম। সারাদিন বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়াতাম। লেখাপড়ার দিকে তেমন কোন মনযোগ ছিল না। মা-বাবা স্কুলে যাওয়ার কথা বললেই বন্ধুদের সাথে খেলার মাঠে চলে যেতাম। সারাদিন ডাংগুলি, গোল্লাছুট, ফুটবল, হা-ডু-ডু, কানামাছি, বৌছি খেলে দিন পার করতাম। তপ্ত রৌদের সময় মেঘনা নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে বন্ধুদের সাথে সাতার কেটে ছুয়াছুয়ি খেলতাম। দুপুরের খাবারের কথা মনে করতাম না। তবে পড়ন্ত বিকেলে পেঠে যখন বেশি ক্ষুধা অনুভব করতাম তখন বাড়িতে ফিরতাম। খাবার দাবার ও পড়াশুনা নিয়ে মা অনেক বকাঝকা করতেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আমি সারাক্ষণ নিয়ম মতো আমার কর্তব্য পালন করেই যাচ্ছি।

অসহায়


এই রিক্সা যাবে।
কৈ যাবেন আফা?
গুলিস্তান।
ভাড়া কত?
৪০ ট্যাহা।
৩০ টাকায় যাবেন।
না, যাব না।
৩১ টাকায় যাবেন।
না- যাব না।
ঠিক আছে, আরো দুই টাকা বাড়িয়ে দিব। ৩৩ টাকা দিব। যাবেন।
আফা এইডা কি মাছের বাজার পাইছেন? ৪০ ট্যাহার নিচে এক ট্যাহা কম হলেও যাব না। এই বলে রিক্সাওয়ালা চলে গেল।
মনিরা সামনে হাঁটছে। কিছুক্ষণ পর আবার আরেক রিক্সাওয়ালা সামনে দিয়ে যাচ্ছে- ঐ রিক্সা যাবেন।

অপেক্ষা


পদ্মা নদীতে এখন যেন কান্নার ঢেউ। চলছে পদ্মাপাড়ে স্বজন হারানো মানুষের আহাজারি। কিছুদিন পূর্বে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ঘাটের কাছে পদ্মা নদীতে তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় পিনাক-৬ লঞ্চ। এই লঞ্চডুবিতে নিহত হয় দিনমজুর খবির উদ্দিনের তিন মেয়েও স্ত্রী। কন্যা ও স্ত্রীর খুঁজে আজ প্রায় এক মাস যাবত পদ্মার পাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন খবির উদ্দিন। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফিরেছেন যাঁরা, তাঁরা নেহাতই ভাগ্যবান। অনেকেই লঞ্চে উঠেছিলেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে। নিজে বেঁচে গেছেন কিন্তু হারিয়েছেন পরিবারের অন্যদেরকে। কিন্তু হতভাগ্য খবির উদ্দিনের পরিবারের কেউ বেঁচে নেয়।

কাশফুল



আকাশে শরতের সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। খুব ইচ্ছে করছে শরতের সাদা মেঘগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। কিন্তু আকাশের দিকে তাকাতে পারছি না। উপরে আকাশ নিচে নদী মাঝখানে আমি ও রফিক। তিতাস নদীর দুপাশে কাশফুল। খুব ভালই লাগছে। আমি আর রফিক কাশফুল দেখার উদ্দেশ্যে নৌকা ভ্রমণে বের হয়েছি সেই বিকাল বেলা। 

শাপলা-শালুক

বর্ষা মানেই বৃষ্টি। আর বৃষ্টি মানেই ঘরে বন্দি হয়ে থাকা। বলা নেই, কওয়া নেই, হুট-হাট করে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। কোথাও বের হওয়া যায় না। রাস্তায় হাটুঁ পানি জমে যায়। কাদায় রাস্তা একাকার হয়ে যায়। ক্লাশে যাওয়া যায় না। অফিসে যাওয়া যায় না। দোকানে যাওয়া যায় না। সারাদিন চুপচাপ ঘরে বসে থাকতে হয়। অবশ্য প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য বর্ষাকাল খুব ভাল। সারাদিন ঘরে বসে ফোনালাপ করা যায়। কবি সাহিত্যিকরা ঘরে বসে গল্প, কবিতা লিখেন। আমি তেমন কোন সাহিত্যিকও নয় যে, এই বর্ষাকালে বৃষ্টির দিনে ঘরে বসে গল্প, কবিতা লিখে সময়টা পার করব। আর ছোটদের জন্য বর্ষাকালটা আরো ভালো। সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে খেলা যায়। বর্ষার পানিতে নেমে সাঁতার খেলা, শাপলা-শালুক কুড়ানো, মাছ ধরা, কলার ভেড়ায় চড়া, নৌকা ভ্রমণ আরো কত কি! বর্ষায় বাংলার মাঠঘাট ডুবে যায়। নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, ডোবা সবই পানিতে টইটুম্বর হয়ে যায়। দূর থেকে পানিতে ভাসমান গ্রামকে দেখে মনে হয় কোন একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। ডিঙি নৌকায়, কলার ভেলায় চড়ে মানুষ এ বাড়ি ও বাড়ি যায়। দৃশ্যটি বেশ উপভোগের।

ভিক্ষুক



সবুজ গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা নদী। বাংলাদেশের অন্যতম নদীগুলোর মধ্যে মেঘনা একটি বৃহৎ নদী। এই গ্রামেই বসবাস করে সুসানের দাদা। এখানেই তার বাবার জন্ম। সুসান তার বাবার সাথে ঢাকায় বসবাস করে। সে মাঝে মাঝে বাবা-মায়ের সাথে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে আসে। 

মায়ের ভালোবাসা


অনিক খুব চঞ্চল স্বভাবের বালক। সারাদিন এ বাড়ী ও বাড়ী ঘুরে বেড়ানো যার কাজ। লেখা পড়ার দিকে তেমন কোন মনযোগ নেই। বাবা-মা স্কুলের কথা বললেই বন্ধুদের নিয়ে চলে যায় খেলার মাঠে। খেলার ছলে কখনো কাউকে চিমটি কাটে। কখনো বা ব্যাট দিয়ে কারো মাথা ফাঁটিয়ে দেয়। আবার কখনো রাগে কারো জামা ছিঁড়ে দেয়। ফল খাওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে কখনো কখনো অন্যের গাছে ঢিল মারে। একদিন পাশের বাড়ীর কুল গাছে ঢিল মেরে তাদের গরুর পানি খাওয়ার গামলা ভেঙ্গে দেয়। এই নিয়ে চলে দু’পরিবারের মধ্যে তুমুল ঝগড়া। সেই থেকে অনিক আর সেই বাড়ীতে যায় না। দিনে অনন্ত ৪/৫টি নালিশ আসে তার বাবা-মার কাছে। বাবার বকুনি ও মায়ের শাসনে দিন কাটছে তার। তাই এখন আর সে অন্যের গাছে ঢিল ছুঁড়ে না কিন্তু অন্য একটি নেশায় পেয়ে বসেছে তাকে। আর তাহলো পাখি শিকার করা। কারণ সে এতদিনে বুঝতে পেরেছে অন্যের গাছে ঢিল ছুঁড়া অন্যায় কিন্তু পাখি শিকার করা অন্যায় না। পাখির বাসা ভেঙ্গে পাখির ছানা ধরা এখন তার নেশা হয়ে গেছে। বনে জঙ্গলে, আশে পাশের ঝোপ ঝাড়, ক্ষেত-খামারে ঘুরে বেড়ানো এখন তার নিত্যদিনের কাজ। এ কাজে কেউ তাকে বাঁধা দেয় না। কেউ আর এখন পাখির বাসা ভাঙ্গার জন্য তার বাবা-মার কাছে নালিশ করে না। তাই মনের আনন্দে নাওয়া-খাওয়া ভুলে পাখির ছানা ধরার নেশায় দিন রাত ঘুরে বেড়াচ্ছে অনিক।